শেখ দিনু আহমেদ, যশোর
নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। করছেন না আইনের তোয়াক্কাও। যশোরে ফসলি জমি, আবাসিক এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে একের পর এক অবৈধ ইট ভাটা। এসব ভাটায় আইন অমান্য করে কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে শুধু পরিবেশই বিষাক্ত হচ্ছে না, বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও। শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, যশোর সদরের সিরাজসিংগা দাখিল মাদ্রাসার পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইট ভাটা। যার বিষাক্ত ধোঁয়ায় দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই ক্লাস করছে ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এ ভাটার অন্যপাশে আবার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। কালো ধোঁয়ায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলের জমি।
সিরাজসিংগা দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবা জানায়, ইট ভাটার কালো ধোঁয়ায় আমাদের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
এছাড়াও প্রচুর ধুলো বালি উড়ে ক্লাস রুমে ঢোকার কারণে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। শুধু তাই নয়, ইট তৈরির মেশিনের অতিরিক্ত শব্দ দূষণের কারণে মাথা ব্যথায় ঠিকমতো ক্লাস করা যায় না।
আরেক শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার জানায়, ইট ভাটার ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে আমাদের অনেক সমস্যা হয়। একদিকে ধুলো উড়ে পরিবেশ নষ্ট করে, আর অন্যদিকে বেপরোয়া ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
এছাড়া রাস্তার ধুলোবালি আমাদের গায়ে লেগে ড্রেস নোংরা হয়ে যায়। ইট ভাটাটি দ্রুত বন্ধ করে দেয়া হলে আমাদের জন্য ভালো হবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় বছরের পর বছর অবাধে চলছে এসব অবৈধ ইট ভাটা।
যশোর সদরের আব্দুর জলিল ও সিরাজসিংগা গ্রামের কৃষক হিরণ বলেন,‘ফসলি জমির পাশে ইট ভাটার ধোঁয়া ও ধুলো বালিতে আমাদের ফসলের জমি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উৎপাদন কমে গেছে, ঘর-বাড়ির চালা ও আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। শিশুরা শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সিরাজসিংগা দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ইট ভাটায় এনে পোড়ানো হচ্ছে। ইট ভাটার ট্রাক চলাচলের কারণে ধুলো বালিতে রাস্তায় চলা যায় না। বৃষ্টি হলে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটে। সেলিম নামে এক যুবক বলে, প্রশাসনের সামনেই বেআইনিভাবে গাছপালা উজাড় করে ইট ভাটাগুলোতে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। অথচ এ বিষয়ে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। পরিবেশ অধিদফতর যশোর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এমদাদুল হকের সাথে এবিষয়ে কথা বলার চেষ্টা চালালে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
এদিকে জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম দৈনিক জনতাকে জানান, আমার কথা একদম স্পষ্ট। যদি কোনো ইট ভাটা থেকে পরিবেশ দূষিত হয় বা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই ওই সকল অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
